বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে অন্তত ৫০টি। কাগজে-কলমে এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ঘাটতি না থাকলেও বাস্তবের চিত্র একেবারেই ভিন্ন।বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম গুলোতে ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও ঠিক সময়ে নেই শিক্ষকের উপস্থিতি।
বিশেষ করে উপজেলার দুর্গম পাঁচটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ তুলেছেন ১৪টি পাড়ার কারবারি (পাড়াপ্রধান)।
অভিযোগে বলা হয়, এসব বিদ্যালয়ে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষকরা নিয়মিত উপস্থিত না থাকায় তারা বঞ্চিত হচ্ছে পাঠদানের সুযোগ থেকে। এতে ঝরে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কোমলমতি শিশুরা।
সম্প্রতি মেনকেউ মেনক পাড়া, পাইয়া পাড়া, রাইতুমনি পাড়া ও ডর মেনরাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় ১৪ পাড়ার কারবারি। প্রতিটি বিদ্যালয়ে কাগজে চার থেকে পাঁচজন শিক্ষক থাকলেও বাস্তবে পাঠদান চলছে অনিয়মিতভাবে।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দেওয়া অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, "স্কুল প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা নিয়মিত শ্রেণী পাঠদান না করে দীর্ঘদিন ধয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে অসতা নথি দাখিলের মাধ্যমে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে এলাকায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের ঠকিয়েছে। প্রকৃত শিক্ষকগন দায়িত্ব অবহেলা করে বিদ্যালয়টিতে একজন বর্গা শিক্ষক দ্বারা শ্রেণীর কার্যক্রম পরিচলনা করেন। এতে শিশু শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা অভিভাবক হিসেবে বহুবার শিক্ষকগণের প্রতি নিয়মিত উপস্থিতি ও দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করেছি। তবুও তাদের থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।"
কারবারি মংপং ম্রো, মেনক ম্রো, রেংরই ম্রো, মাংক্রাত ম্রো, লক্ষিমনি কারবারি ও ববিরত কারবারিরা বলেন, আমাদের সন্তানরা প্রতিদিন স্কুলে গেলেও শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকেন। এতে শিশুরা পড়াশোনা থেকে আগ্রহ হারাচ্ছে। দিনের পর দিন তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ে দুর্গম এলাকাগুলোর শিক্ষক অনুপস্থিতি থাকা স্বাভাবিক একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্গম এলাকার অনেক স্কুলে বর্গা শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালাচ্ছেন। শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষও এসব বিষয়ে অবগত আছেন। তারপরও স্কুলে অনুপস্থিতি থাকার বিষয়ে কঠোর হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে কমচঙ ইয়ুংছা মাওরুম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিকসন পাল বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক ও ৮৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কখনো দুইজন, কখনো তিনজন, আবার কখনো পাঁচজন শিক্ষক উপস্থিত থেকে পাঠদান করছেন। প্রধানত দপ্তরী কাজ আর বাজার সাজার কারণে সদরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দুর্গম এলাকায় আগে বর্গা শিক্ষক ছিলেন, তবে বর্তমানে আর নেই।
আলীকদম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়া বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের ইতোমধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষকরা নিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ বিষয়ে ইউএনও মহোদয়সহ আলোচনা করে তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর আলম বলেন, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা অফিস থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি খুব শিগগিরই তিনি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করবেন বলে জনান এই কর্মকর্তা।
আরো পড়ুন