বান্দরবানে রুমা ও থানচিতে গত বছর ২ ও ৩ এপ্রিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) কতৃর্ক সংঘটিত ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া লাল ত্নেং কিম বম (৩০) নামে এক যুবক গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার (১৬ মে) বিকাল ৩টায় বান্দরবানে আদিবাসী ছাত্র সমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাজার মাঠ থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি মধ্যম পাড়া, উজানি পাড়া ও বান্দরবান বাজার হয়ে প্রেসক্লাব চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ইয়াং বম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লালথার ঙাক জেমস বম, বান্দরবান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জিনাস বম এবং মারমা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি উমংছিং মারমা।
বক্তারা বলেন, লাল ত্নেং কিম বম দীর্ঘদিন কারাগারে বিনা চিকিৎসায় থাকার ফলে মৃত্যুবরণ করেছেন, যা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় কোনো তদন্ত ছাড়াই বম জনগোষ্ঠীর শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও বৃদ্ধদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বম সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় চার হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে দেশান্তরি হয়েছেন এবং শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বক্তারা দাবি করেন, কেএনএফ-এর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক, তবে নিরপরাধদের যেন বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থী জিনাস বম বলেন, “৫ আগস্টের পর দেশে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরাও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, অথচ নিরপরাধ বম শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের এখনো মুক্তি দেওয়া হয়নি। এটা বৈষম্য নয় কি?”
লালথার ঙাক জেমস বম তার বক্তব্যে বলেন, লাল ত্নেং কিম বমের মৃত্যু দুই দিন হয়ে গেলেও এখনও মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মরদেহ পড়ে আছে, অথচ বম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তিন দিনের বেশি দেহ সংরক্ষণ করা যায় না।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে সংঘটিত ব্যাংক ডাকাতি, হামলা এবং পুলিশ ও আনসার বাহিনীর অস্ত্র লুটের ঘটনায় রুমা থানায় ১৪টি, থানচি থানায় চারটি, বান্দরবান সদর থানায় একটি এবং রোয়াংছড়ি থানায় তিনটি — সর্বমোট ২২টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় কেএনএফ-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ২৫ জন নারীসহ ১১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।