বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর চালানো এক বিশেষ অভিযানে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) একজন সামরিক কমান্ডার সহ ২ জন নিহত হয়েছে।নিহতদের নাম এখনো সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
বুধবার (৩ জুলাই) ভোররাতে এই অভিযান পরিচালিত হয়,অভিযান শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেন রুমা সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ আলমগীর, পিএসসি।
প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয় রুমা সেনা জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ আলমগীর এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর চৌকস কমান্ডো সদস্যরা রুমা উপজেলার ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মুয়ালপি পাড়া ও পলি প্রাংসা পাড়ার মাঝামাঝি অবস্থিত তাইংদাং ঝিড়ির আগা ও নাইতং পাহাড়ের পাদদেশে কেএনএ সন্ত্রাসী ঘাটিতে এ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে দু পক্ষের গুলাগুলিতে কেএনএ সন্ত্রাসীদের প্রধান একটি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে কেএনএ এর সামরিক শাখার একজন কমান্ডার সহ দুই জন সন্ত্রাসী নিহত হয়।
এ সময় সন্ত্রাসীদের ব্যাবহৃত ১টি রাইফেল, এসএমজি ম্যাগাজিন ৩টি, ৮টি ইউনিফর্ম, ৩ টি মিঃ এ্যামো, ৬০ রাউন্ড মিঃ এ্যামো, ২৩৭ রাউন্ড গুলি ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
প্রেস ব্রিফিং এ রুমা সেনা জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, নিহত ২ কেএনএ সন্ত্রাসী গত বছরের ২ ও ৩ এপ্রিল আলোচিত রুমা ও থানচি উপজেলায় সংঘটিত সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন।
সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে জানানো হয়েছে এখনো পুরো এলাকা ঘিরে রেখে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান গতকাল রাত থেকেই সেনা সদস্যরা পাহাড়ি ওই এলাকায় অভিযান শুরু করে। “ভোররাতে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই।
উল্লেখ্য গত কয়েক বছরে কুকি-চিন সন্ত্রাসী সংগঠন বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে সক্রিয় হয়ে উঠে।স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের কাছ হতে মোটা অংকের চাঁদ আদায়,অপহরণ,গুম ও ক্ষুনের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করে।
তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বিগত সরকারের আমলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মাধ্যমে কয়েক দফা আলোচনা চালানো হয়। শান্তি আলোচনা চলা অবস্থায় পাহাড়ে তাদের বিরুদ্ধে সকল অভিযান বন্ধ রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিগত ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসের ২ ও ৩ তারিখ বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে,টাকা ও আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনির অস্ত্র লুটের ঘটনার মাধ্যমে তাদের শক্তি জানান দিয়ে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় সরকারকে।
এতে কেএনএফ এর সাথে সকল শান্তি আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করে সরকারের উচ্চ পর্যায় হতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রসঙ্গত সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে গত ২৬শে জুন বান্দরবানের রুমা উপজেলার সুসুং পাড়ায় পালিয়ে যাওয়া ১২২ টি বম পরিবার ফিরে এসেছেন তাদের নিজ আবাসে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে জানানো হয় যারা এখনও ফিরে আসতে পারেননি, তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।