অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পার্বত্য জেলা বান্দরবান,জেলার ৭ টি উপজেলায় রয়েছে মনোমুগ্ধকর অসংখ্য পর্যটন স্পষ্ট।দীর্ঘদিন পাহাড়ে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের কারনে,জেলায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে রোয়াংছড়ি, রুমা,থানচি তিনটি উপজেলার পর্যটন স্পষ্টে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছিলো প্রশাসনের।পরবর্তীতে ধাপে ধাপে উপজেলার কয়েকটি পর্যটন স্পষ্ট খুলে দিলেও রুমা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং পর্যটকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিলো,গত ২৮শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের একটি অনুষ্ঠানে ১লা অক্টোবর কেওক্রাডং ভ্রমণ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি,পরের দিন পর্যটকদের নিরাপত্তা বিবেচনা এবং পর্যটন স্পষ্টে আগত পর্যটকদের সুবিধা বৃদ্ধি বিবেচনা করে দুর্গাপূজার পর আলোচনা সাপেক্ষে কেওক্রাডং পর্যটকদের জন্য উন্মুক্তের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সোমবার (২৯শে সেপ্টেম্বর) বিকালে একটি গনবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৬ টি শর্ত মানা সাপেক্ষে বান্দরবান জেলার সকল পর্যটন স্পষ্ট দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্তের সিদ্ধান্ত দেয় জেলা প্রশাসন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামিম আরা রিনি স্বাক্ষরিত গনবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, জেলা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সমন্বয় সংক্রান্ত কোর কমিটির গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের সভার সিদ্ধান্ত, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, রুমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলার গত ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের ০৫.৪২.০৩৯১.০০১.০৩.০১৩.২৫-৫৮৮ সংখ্যক স্মারকমূলে প্রেরিত পত্র এবং সদর দপ্তর, বান্দরবান রিজিয়ন, বান্দরবান সেনানিবাসের ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের
১৪০/৩১/জিএস(ইন্ট) পত্রের আলোকে বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা উপজেলার কেওক্রাডং পর্বত,পর্যটন কেন্দ্রটি আগামী ১লা অক্টোবর ২০২৫ তারিখ হতে সকল পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলো এবং
জনস্বার্থে এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলো।
এসময় কেওক্রাডং ভ্রমনে ৬ টি শর্ত মানার জন্য বলা হয়
শর্তগুলো হলো-
১) সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় রুমা উপজেলার যে সকল পর্যটন কেন্দ্র উন্মুক্ত করা হয়েছে সে সকল পর্যটন কেন্দ্র ব্যতীত উপজেলার অন্য জায়গায় পর্যটকদের গমনাগমন নিষিদ্ধ থাকবে।
২) জেলা/উপজেলা প্রশাসনের নিবন্ধিত ট্যুর গাইড ব্যতীত ভ্রমণ করা যাবে না।
৩) পর্যটন কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট চেকপোস্ট/ পর্যটন তথ্য সেবা কেন্দ্রে চাহিত তথ্য অবশ্যই সরবরাহ করতে হবে।
৪) পর্যটক কর্তৃক উপর্যুক্ত নির্দেশনাসমূহ অমান্য করা হলে তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/নিকটবর্তী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীকে অবগত করতে হবে।
৫) পাহাড়ি রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগী ও ফিটনেসবিহীন সকল যানবাহন উল্লিখিত পর্যটন কেন্দ্ৰসমূহে চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে এবং পর্যটকবাহী সকল যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৬) অযাচিত যেকোন ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট পর্যটন সংস্থার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং পর্যটন শিল্পের উপর
পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর কেওক্রাডং পর্যটকদের জন্য উন্মুক্তের ঘোষণায় খুশি স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়িরা।
প্রসঙ্গত ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের অপ-তৎপরতা বৃদ্ধির কারনে জেলায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর জেলার রুমা উপজেলা,রোয়াংছড়ি উপজেলা ও থানচি উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন ।
২০২২ সালের ৯ অক্টোবর থেকে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে তিন উপজেলায় যৌথ বাহিনীর কেএনএফ সন্ত্রাসী দমনে অভিযান শুরু করলে নিরাপত্তার কারণে ২০ অক্টোবর থেকে তিন উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি হয় প্রশাসন।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যায়ক্রমে জেলার কয়েকটি এলাকায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়,সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুম পর্যটন স্পষ্ট পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া বান্দরবান জেলা প্রশাসন।অবশেষে কয়েক দফা সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের পর কেওক্রাডং পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করে ২৯শে সেপ্টেম্বর গনবিজ্ঞপ্তি জারি করলো বান্দরবান জেলা প্রশাসন।
আরো পড়ুন