বর্ষাকালের প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বান্দরবানে শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি সংযোগ সড়কে চলছে আরসিসি ঢালাই কাজ। শহরের জেএসএস গলির এই সড়কটি একদিকে জেলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং অপরদিকে ট্রাফিক মোড় হয়ে উজানীপাড়া সড়কে গিয়ে মিশেছে। ভারি বর্ষণের মধ্যেই নির্মাণকাজ চলায় গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, টানা তিনদিন ধরে বান্দরবানে বৃষ্টি হচ্ছে। রাতভর বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে থাকলেও ভেজা অবস্থায়ই সিমেন্ট-বালু-কংক্রিট মিশিয়ে ঢালাই করা হচ্ছে। শুক্রবার ছুটির দিনেও থেমে থেমে বৃষ্টির মধ্যে কাজ চলতে দেখা গেছে।
বান্দরবান পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পৌরসভার অধীনে সড়কটি উন্নয়ন করা হচ্ছে। প্রায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কে আরসিসি ঢালাই কাজের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কাজটি বাস্তবায়ন করছেন ইউটিং মং মারমা লাইসেন্সে সায়ন চৌধুরী নামে এক ঠিকাদার।
ঠিকাদার সায়ন চৌধুরী বলেন, কাজটা ৩০ জুনের মধ্যে শেষ না হলে জামানতের টাকা আটকে যাবে। বাজেট ও বিল অনুমোদন বন্ধ হয়ে যাবে। বাধ্য হয়েই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মংক্যপ্রু মারমা বলেন, অনেক বছর ধরে রাস্তাটি খারাপ অবস্থায় ছিল। এবার বরাদ্দ পেয়ে আশা করেছিলাম ভালো কিছু হবে। কিন্তু এখন যেভাবে বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই হচ্ছে, রাস্তাটি টিকবে না।
আরেক বাসিন্দা সুইক্য মং মার্মা বলেন, মানুষের ট্যাক্সের টাকায় যদি এভাবে কাজ হয়, তবে উন্নয়ন না করাই ভালো। অন্তত টাকা অপচয় হতো না।
স্থানীয় এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কংক্রিট ঢালাইয়ের ক্ষেত্রে আবহাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই করলে কংক্রিটের অনুপাত ঠিক থাকে না। ফলে পরবর্তীতে রাস্তায় ফাটল, গর্ত কিংবা ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এটি প্রকৌশলগত দিক থেকে সম্পূর্ণ অনুচিত। তা সত্ত্বেও জোর করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এসব সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।
পৌরসভার মাঠপর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সত্যজিত তচঙ্গ্যা বলেন, বৈরি আবহাওয়া ও সরকারি ছুটির কারণে ঢালাইয়ের অনুমতি ছিল না। হঠাৎ নির্বাহী প্রকৌশলীর ফোনে এসে দেখি কাজ চলছে। সঙ্গে সঙ্গে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে হালকা বৃষ্টিতে কিছুটা কাজ চলতে পারে, ভারি বৃষ্টিতে নয়।
এ বিষয়ে বান্দরবান পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বলেন, জুন ক্লোজিংয়ের চাপে অনেক সময় ঠিকাদারদের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহেও এভাবে কাজ করার চেষ্টা করা হলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যদি এবারও প্রমাণ মেলে যে বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই হয়েছে, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরো পড়ুন -বান্দরবানের লামায় সেনা অভিযানে অস্ত্র সরঞ্জামসহ ৯ জন আটক