বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১৬ বছরে জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক খাতে আর্থিক বরাদ্দের জন্য বান্দরবান জেলা পরিষদের অনুকুলে খাদ্যশস্য প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর হতে চাল ও গম মিলিয়ে মোট বরাদ্দ এসেছে ২ লাখ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য।
এর মধ্যে চাল ১ লাখ ২০ হাজার মেঃ টন এবং গম বরাদ্দ এসেছে প্রায় ৮০ হাজার মেঃটন।
দাপ্তরিক সকল খরচ বাদ দিয়ে গড়ে চালের দাম টন প্রতি ৪০ হাজার টাকা হিসেবে ধরা হলে ১৬ বছরে মোট ৪৮০ কোটি টাকার চাল বরাদ্দ এবং গমের দাম প্রতি টন ৩০ হাজার টাকা হিসেবে ২৪০ কোটি টাকার বরাদ্দ সহ,১৬ বছরে জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে খরচের জন্য জেলা পরিষদ বরাদ্দ পায় ৭২০ কোটি টাকা।
বিগত ১৬ বছরে জেলার উন্নয়নের জন্য প্রাপ্য কোটি টাকার এই বরাদ্দের সব টাকাই খরচ হয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প আর সহযোগিতা প্রকল্পের কাজে।
অনুসন্ধানে দেখা যায় বেশির ভাগ প্রকল্পের বাস্তবিক কোন অস্তিত্ব না থাকলেও সে সব প্রকল্পে প্রদানকৃত টাকা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের হিসাব জেলা পরিষদের হিসাব শাখায় সংরক্ষণে রাখা আছে স্বযত্নে।
কাগজপত্র ঠিক রেখে ভূঁতুড়ে এসব প্রকল্প তৈরি করে এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আত্মসাৎ করা হয়,যার মূল হোতা হিসেবে বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তৎকালীন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা ও হিসাবরক্ষক উসাজাইয়ের নাম উঠে আসে।
এরই মধ্যে ৭২০ কোটি খাদ্যশস্য প্রকল্পের দুর্নীতিতে অভিযুক্ত থাকা দুদকের প্রাথমিক মামলার তদন্তে আসামী হয়েছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের হিসাব রক্ষক উসাজাই।
এতো বড় দূর্নীতির সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ থাকলেও তার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো রকম আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পূর্বের মতো বর্তমানেও তাকে একই কাজে বহাল রাখায় ক্ষুব্ধ খোদ জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
একটি বিশ্বস্থ সুত্রে জানাযায় জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই দূর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ না করায় জেলা পরিষদের সদস্য, কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে একটি পত্র প্রেরণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বান্দরবান জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লাসহ অন্যান্য সদস্যরা ভারতে ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে গা-ঢাকা দেন।এরপর ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৪ জন সদস্য নিয়ে,অধ্যাপক থানজামা লুসাইকে চেয়ারম্যান করে অন্তর্বর্তীকালীন বান্দরবান জেলা পরিষদে নিযুক্ত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পরিষদের একাধিক সদস্য বলেন, “আওয়ামী লীগ আমলে সাবেক চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা ও হিসাবরক্ষক উসাজাই ভুয়া কাগজপত্র ও প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সরকার পতনের পর ক্যশৈহ্লা বিদেশে পালিয়ে গেলেও উসাজাই এখনো কীভাবে খাদ্যশস্য প্রকল্পে সক্রিয়, সেটা আমরা কেউই বুঝে উঠতে পারছি না। তাঁর বিরুদ্ধে ৭২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা চলমান,অথচ এখনও তিনি বহাল তবিয়তেই আছেন।
অনুসন্ধানী সুত্র বলছে, দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, হিসাব রক্ষক,উসাজাই সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করতে পারেন, এজন্যই টিকে আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাযায় আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি নিজেই প্রকল্প থেকে অব্যাহতি চাইলেও চেয়ারম্যানের সিএ মোতালেব তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আবারও আগের মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরিষদের কর্মকর্তারা জানান জেলা পরিষদের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য সর্বমহলে শ্রদ্ধাভাজন বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই নিজেও এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
এই বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের হিসাবরক্ষক উসাজাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগে একাধিক বার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি, অফিসে গিয়েও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, “উসাজাইয়ের বিরুদ্ধে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা অভিযোগ পেয়েছি।
আমি অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।আমার দপ্তরে দূর্নীতি করে কোন কর্মকর্তা কর্মচারী থাকতে পারবে না।
আরো পড়ুন -
রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের