সু-উচ্চ পাহাড়ের মাঝে ঘনসবুজ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর মেঘের মিতালী,সবুজ প্রকৃতির বুক চিড়ে পাহাড়ি আকাবাকা পথে ছুটে চলার এই উন্মাদনা আসলে কেমন তা শুধু ভ্রমণ পিপাসুদেরী জানা।
পাহাড় কণ্যা পার্বত্য জেলা বান্দরবানের অপার নৈসর্গিকী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য,সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য,পাহাড়ের বাকে বশে চলা নদী, ঝিড়ি,ঝর্ণার কলতান জেলায় আগত সকল পর্যটকদের মনে ঘেতে থাকে ক্যানভাসের মতো।
বর্ষায় প্রকৃতি যেনো নতুন রূপে সাজে,জেলার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক নিদর্শন আলীকদম উপজেলার অসংখ্য ঝর্ণা ও জলপ্রপাত। "দামতুয়া ঝর্ণা" ঝর্ণা তার মধ্যে অন্যতম।
পাহাড়ের গা বপয়ে , ঝুমঝুম সুর তুলে মাতাল স্রোত গড়িয়ে পড়ছে নিচের গভীর জলাশয়ে,প্রকৃতির নিস্তব্ধতার মাঝে ঝর্নার পানির এই শব্দ অমলিন।উপর থেকে ঝর্নার পানি পাহাড়ের গায়ে লেগে জলীয় বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে ধোঁয়াশাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে যা দর্শনার্থীদের ঝর্ণা দেখার আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
প্রকৃতির খেয়ালে গড়া অসাধারণ এই স্থাপত্যশৈলী টি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত।
স্থানীয় মুরং আদিবাসীদের কাছে এটি "তুক অ ঝর্ণা" বা "লামোনই ঝর্ণা" নামে পরিচিত। বর্ষাকালে এই ঝর্ণা পূর্ণ যৌবনে নিজের সৌন্দর্যে ফিরে আশে ।
এই ঝর্ণার আবিষ্কার কবে হয়েছিল, তার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা বছর খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় মুরং আদিবাসীদের কাছে বহু বছর ধরে পরিচিত এবং তাদের ভাষায় এর নামকরনও করা হয়।
২০১৫ সালের দিকে পর্যটকদের কাছে এটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে । কিছু তরুণ পর্যটক দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে এই ঝর্ণাটি খুঁজে বের করে,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর কিছু ছবিও প্রকাশ করে। এরপর থেকে এটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনজুর আলম ঢাকা পোস্ট কে বলেন আমি সদ্য আলীকদম উপজেলায় যোগাদান করেছি।উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক অনেকগুলো ঝর্নার ভেতর দামতুয়া ঝর্ণা অন্যতম।দূর্গম যোগাযোগ ব্যাবস্থার মাঝেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক পর্যটক এখানপ ঘুরতে আসে।
আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনী এবং উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্বক কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতে ঝর্ণার কাছাকাছি পর্যটকদের আবাসনের ব্যাবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে যাতায়াতের জন্য পাঁকা রাস্তা করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
দমতুয়া ঝর্ণা দেখতে যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে চকরিয়া আসতে হবে এবং চকরিয়া থেকে বাসে বা জীপে আলীকদম আসতে হবে। এরপর আলীকদম বাজার থেকে মোটরসাইকেল বা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টে যেতে হবে। এই স্থানটি আদু মুরং পাড়া নামেও পরিচিত। আদু মুরং পাড়া থেকে আপনাকে স্থানীয় গাইড নিতে হবে। এখান থেকে প্রায় ২-৩ ঘন্টার ট্রেকিংয়ের পর আপনি দামতুয়া ঝর্ণায় পৌঁছাতে পারবেন। দুর্গম হওয়ায় অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য এই যাত্রা খুবই উপভোগ্য।
এছাড়া আলীকদম উপজেলায় আরও রয়েছে রূপমুহুরী ঝর্ণা, ওয়াংপা ঝর্ণা, তাংমাইন ঝিরি ঝর্ণা এবং থানকোয়াইন ঝর্ণা।
পথে যা যা দেখতে পাবেন :
চকরিয়া থেকে আলীকদম যাওয়ার পথে লামা উপজেলার মিরিঞ্জাভ্যালী, মারাইংছাহিলসহ অসংখ্য পর্যটন স্পট ভ্রমণ করতে পারেন এবং আলীকদম থেকে দামতুয়া ঝর্ণায় যাওয়ার পথে দীর্ঘ ১৭ কিলোমিটারের রাস্তায় অসংখ্য পাহাড়ি ভিউ উপভোগ করতে পারবেন।
জানা জরুরি :
দামতুয়া ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার পথে আপনাকে সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি জমা দিতে হবে।ভ্রমণের সকল ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সকল নিয়ম মেনে ভ্রমণ করতে হবে।
আরো পড়ুন
বান্দরবান সেনা রিজিয়ন কাপ ফুটবল এর ফাইনাল অনুষ্ঠিত,প্রান্তিক পর্যায় হতে খেলোয়াড় অন্বেষণ