1. bandarbansongbad@gmail.com : বান্দরবান সংবাদ : বান্দরবান সংবাদ
  2. info@www.bandarbansongbad.com : বান্দরবান সংবাদ :
বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:২৮ অপরাহ্ন

পাহাড়ে অর্থনীতির দিনবদলে অবদান রাখছে কফি ও কাজুবাদাম,স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখছেন পাহাড়ের কৃষক

মোঃ শহীদুল ইসলাম, নিউজ ডেস্ক।
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫
  • ৬২ বার পড়া হয়েছে

পাহাড়ে পরিবেশ ধ্বংসকারি সেগুনের পরিবর্তে কফি ও কাজুবাদাম চাষকে লাভজনক বিবেচনা করে কপি ও কাজুবাদাম চাষকে প্রাধান্য দিচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের অধিভূক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ পার্বত্য তিন জেলা পরিষদ ও স্থানীয় কৃষি বিভাগকে পাহাড়ের কৃষকদেরকে কফি ও কাজুবাদাম চাষের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ইতিমধ্যেই অনগ্রসর পাহাড়বাসীদের আত্মকর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে পার্বত্যাঞ্চলে কফি ও কাজু বাদাম গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় মন্ত্রণালয়ের অধীন উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদগুলোসহ স্থানীয় কৃষি অফিসগুলোর মাধ্যমে পাহাড়ের কৃষকদের কফি ও কাজুবাদামের চারা বিতরণ সহ স্থানীয় কৃষক-কৃষানীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

তথ্য সুত্রে জানাযায় পার্বত্য অঞ্চলে কফি-কাজু বাদামের চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণের আগে শুধু ১৮০০ হেক্টর জমিতে এর চাষ হতো।

২০২১সাল কফি-কাজু বাদাম চাষ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে বর্তমানে  প্রায় ৪২০০ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম চাষাবাদ হচ্ছে।
একই সাথে পূর্বে শুধুমাত্র ৬৫ হেক্টর জমিতে কফি চাষাবাদ করা হতো, বর্তমানে ১৮০০ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে কফির চাষাবাদ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলার ১২ টি উপজেলায় প্রায় ২ হাজার কফি ও কাজুবাদামের বাগান সৃজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কফি ও কাজু বাদাম চাষের মাধ্যমে দারিদ্র হ্রাসকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ জসিম উদ্দিন।

তিনি জানান, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনাবাদি জমিতে কাজুবাদাম ও কফি চাষ সম্প্রসারিত প্রকল্প কার্যক্রম পরিচালনা করছে উন্নয়ন বোর্ড।
পার্বত্য অঞ্চলে কাজুবাদাম ও কফি চাষ সম্প্রসারণের ফলে আগে যেখানে জুম চাষ হতো সেখানে এখন কাজুবাদাম ও কফি চাষ হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে পার্বত্য এলাকার মানুষ কাজুবাদাম ও কফি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

কৃষিবিদ মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে কৃষি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সেখানে কফি চাষ নতুন একটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। কফি চাষ শুধু অর্থনৈতিক সুযোগই সৃষ্টি করে না এটি মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, পরিবেশবান্ধব এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বেকার সমস্যা সমাধান ও উদ্যোক্তা তৈরীতে অত্যন্ত সহায়ক। পার্বত্য এলাকায় যেখানে পরিকল্পিত ও ফাঁকা স্থানযুক্ত ফলবাগান রয়েছে সেখানে অনায়াসে কফি বাগান করা যায়। বাগানে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে আম, মাল্টা, কাঁঠাল, কমলা, কলা, আনারসের পাশাপাশি একই বাগানে কফি চাষেও সাফল্য মিলছে।

আর এটাই কফিতে কৃষকের আগ্রহের মূল কারণ।সবচেয়ে আশার কথা হলো “বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় পাঁচ লাখ হেক্টর অব্যবহৃত জমি রয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ হেক্টরে কফি চাষ করলে দুই লাখ টন কফি উৎপাদন সম্ভব”।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৯২ শতাংশ উঁচু ভূমি, তাই এখানে পানি জমে না, যা কফি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ কফি গাছ চাষ করতে বাড়তি জমিরও প্রয়োজন হয় না। কারণ আমবাগান, লিচু বাগান কিংবা অন্যান্য বাগানের গাছের ছায়ায় এ কফি গাছ চাষ করা সম্ভব।
পাহাড়ি অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া কফি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পাহাড়ে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার কফি-কাজুবাদামের বাগান সৃজিত করেছে স্থানীয় কৃষকদের মাধ্যমে।

এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দেশে উৎপাদিত কাজুবাদাম ও কফির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।

পাহাড়ে এই প্রকল্পের শুরু থেকেই এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলমান রয়েছে। তিনি জানান, পার্বত্য অঞ্চলের ২ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমিকে কাজুবাদাম ও কফি চাষের আওতায় আনার কাজ চলমান রয়েছে।

এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে উৎপাদিত কাজুবাদাম ও কফির মাধ্যমে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ১ বিলিয়ন ডলার এর রপ্তানি করা সম্ভব।
কাজুবাদাম ও কফির আবাদ সম্প্রসারণের ফলে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। সম্পূর্ণ বেসরকারিভাবে এসব কারখানা স্থাপিত হয়েছে। প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের ফলে দেশে উৎপাদিত কাজুবাদামের বাজারজাতকরণ সহজ হচ্ছে।
দেশে কাজুবাদামের ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে কাজুবাদামের ২২টি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। দেশে বর্তমানে কাজুবাদামের বাজার প্রায় ৭০০ কোটি টাকার। প্রতি বছর গড়ে ২৫০০-৩০০০ টন প্রক্রিয়াজাতকৃত কাজুবাদাম আমদানি হয়।
দেশে কফির চাহিদা প্রায় ২০০০ টন। গত এক দশকে গড়ে কফির চাহিদার প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫৬ শতাংশ। বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার কফি দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি হয়। ভোক্তা পর্যায়ে গত ৫ বছরে এ দুটি পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশের উৎপাদিত কফিও দেশের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় ব্যবহার হচ্ছে।
প্রকল্পের প্রভাবে নতুন নতুন চাষি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।কাজুবাদাম ও কফি চাষ সম্প্রসারণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের ফলে দেশে কর্মসংস্থানের সংযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বড় শিল্পগোষ্ঠীর প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করছে।
বিএসআরএম ও কাজী গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান রপ্তানির উদ্দেশ্যে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করছে। এসব কারখানায় প্রায় ১২০০ জনের মতো লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এছাড়া বিদ্যমান প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলোতে প্রায় ২০০০ জন শ্রমিক কাজ করছে। এসব শ্রমিকের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হলো নারী শ্রমিক।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত কপি-কাজুবাদাম চাষ প্রকল্পটি ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচনের হওয়ার কথা থাকলেও সেটি প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব ও স্থানীয় পাহাড়ি কৃষকদের অসচেতনতার কারনে সঠিক সময়ে সময়োগযোগি হয়ে উঠছেনা বাগানগুলো।

সংশ্লিষ্ট্যরা জানিয়েছেন, দূর্গম পাহাড়ে প্রায় ২ হাজার বাগান রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে মাত্র ৬জন মাঠ সংগঠক। এসব মাঠ সংগঠকের নেই কোনো ডিপ্লোমা ডিগ্রি। যারফলে চারা রোপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা সময়মতো সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে জনবলের অভাব ও কৃষকদের সময়োপযোগী বাগান সৃজনে বিলম্ব হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কফি ও কাজু বাদাম চাষের মাধ্যমে দারিদ্র হ্রাসকরণ প্রকল্পের, প্রকল্প বাস্তবায়নের মোট বরাদ্দের অর্ধেক  ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা মন্ত্রণালয়ে ফেরত দিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর।

এ বিষয়ে তিনি জানান দক্ষ জনবলের অভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে,তাই আমাদের লক্ষ অনুযায়ী আরো বেশি পরিসরে কফি ও কাজুবাদামের বাগান সৃজন ও কৃষকদের চারা বিতরণ সম্ভব হয়ে উঠেছে না,এ কারনে প্রকল্পের বরাদ্দের অর্ধেক টাকা আমরা ফেরত দিয়েছি।

এছাড়াও দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠিদেরকে সময়োপযোগি প্রশিক্ষণও দেওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে অর্থনৈতিক ব্যাপক সম্ভাবনাময় কফি-কাজুবাদাম চাষ এখনো পর্যন্ত পাহাড়ে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছেনা।

কফি ও কাজুবাদাম চাষবাদের বিষয়ে , বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এম এম শাহ নেওয়াজ বলেন,পার্বত্য বান্দরবানের আবহাওয়া ও পরিবেশ কফি ও কাজু বাদাম চাষের যথেষ্ট উপযুক্ত,অর্থকরী ফসল হিসেবে কাজুবাদাম ও কফি চাষাবাদের জন্য আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।

২০২০-২১ অর্থবছরে কাজু বাদাম ও কফি গবেষণা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে শুরু হয় ১৯ টি জেলায়,যার মধ্যে বান্দরবানও অন্তর্ভুক্ত।এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছি।কৃষকদের জন্য ভিয়েতনাম থেকে আনা উন্নত কাজুবাদাম চারা এম২৩,এবং উন্নত জাতের এরাবিকা,রোবাস্টা জাতের কফি চারা কৃষকদের দেয়া হয়,প্রথমবার চারা ও সার ও বালাইনাশক দেয়া হয়।

বান্দরবানে পূর্বে ৮ শত হেক্টর থেকে বেড়ে এখন ৩ হাজার হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম চাষাবাদ হচ্ছে,পূর্বে কফি চাষ হতো ৪ শত হেক্টর জমিতে যা বর্তমানে ১ হাজারে উন্নিত হয়েছে।

কাজুবাদাম ও কফি অন্য ফলমূলের মতো পচনশীল না,কৃষকরা এসব শুখিয়ে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবে এবং নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে বাজারজাত করতে পারবে।পার্বত্য অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত লাভজনক কৃষি কফি ও কাজুবাদাম চাষ।

 

 

আরো পড়ুন –

বান্দরবান জেলা পরিষদে ভূতুড়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাস্টার মাইন্ড হিসাব রক্ষক উসাজাই,এখনো বহাল তবিয়তে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট