বান্দরবানের ইমানুয়েল মেডিকেল সেন্টারে অক্সিজেন সংযোগ দিতে বিলম্ব হওয়ায় রিমা ত্রিপুরা (৩০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বান্দরবান সংবাদ শিরোনাম দেয়— “বান্দরবানে ইমানুয়েল হাসপাতালে অক্সিজেন বিলম্বে রোগীর মৃত্যু”। এ সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সময়ে ভুল চিকিৎসা ও হাসপাতালের গাফিলতিতে ভুক্তভোগী হওয়া রোগী ও স্বজনরা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে থাকেন।
ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা জান্নাত নাইমা নামের এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এই হসপিটালের গাফিলতির কারণে আমার আম্মা মারা যায়। স্ট্রোকের রোগীকে বিল বাড়ানোর ধান্ধায় ১ দিন হসপিটালে কোনো চিকিৎসা না করে রেখে দেয়। আল্লাহ এদের বিচার করবে। এদের ডাক্তার আর হসপিটালের মিসম্যানেজমেন্টের কারণে আজকে আমরা মা হারা।”
রিনা তাজলিম নামে আরেক ভুক্তভোগী লিখেছেন, “২০২০ টিবির ইনফেকশন কথা মনে পরলেও ঘা শিউরে উঠে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা তখন নেওয়া উচিত ছিল। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পুরো বছর অটিতে টিবি রোগের জীবাণু ছিল। তারা এটা জেনেও অপারেশন থিয়েটাররে (OT) কাজ চলমান রেখেছে কোনোরকম ব্যবস্থা না নিয়ে। শেষমেশ ৬৫ জনের ঊর্ধ্বে রোগী বান্দরবান সদর হাসপাতালে সেবা নেই তখন সার্জন মিনা ম্যাম প্রথম সনাক্ত করেন এটা টিবি রোগের ইনফেকশন। তিনি ইমানুয়েলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেন।”
ফারজানা মিলি নামে আরেক ভুক্তভোগী লিখেছেন, “২০২০ সালে আমিও একটা ছোট টিউমার অপারেশন করে ১ বছর লাগছে সেলাই শুকাতে। ৭ হাজার টাকায় ছোট একটা অপারেশন করে লাখের উপরে খরচ করে চট্টগ্রাম ঢাকা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছিলাম। টানা ৫ মাস এন্টিবায়োটিক খেয়েছি।”
রোশান নিসমা নামে আরেকজন লিখেছেন, “আমার তো কিছুই বলার নাই। আমি নিজেও ভুক্তভোগী। ভেবেছিলাম মানহানির মামলা দিবো ২০২০ এ সিজার এর পর। এরপর রোগীদের নিয়ে মিথ্যা কথা রটানো তারপর রিসেন্ট আমার নিজের ছোট বোন তো প্রাই মরতে মরতেই বেচে ফিরলো, কিন্তু তারা চুপথাকাকে কি মনে করেন জানিনা। আসলে সত্য গোপন থাকে না। তাদের মেক্সিমাম স্টাফ, নার্স, আর আয়া বাবাগো আয়ারাতো বিসিএস ক্যাডার এক এক জন। অনেক অনেক কথা আছে চুপ করে থাকি ভদ্রতার খাতিরে।”
তিনি আরো লিখেছেন, “২০২০ এর মে মাসে মেয়ে হয়। প্রাই ৮ মাস পর সেলাই শুখাইসে। তখন জানতাম না টিবির ইনফেকশন ছিল, না বুঝে কত এন্টিবায়োটিক খেয়েছি। সেই দিনগুলো চিন্তা করলে ভয় পাই।”
উল্লেখ, গত শুক্রবার রাতে শ্বাসকষ্ট ও মাথার সমস্যা নিয়ে রিমা ত্রিপুরাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার (২৩ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে স্বজনরা নার্স ও চিকিৎসকদের ডাকাডাকি করলেও দ্রুত কোনো সাড়া মেলেনি। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর নার্স এসে অক্সিজেন সংযোগ দেওয়ার পরেই মারা যায় বলে দাবি করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের স্বীকারোক্তি এ ঘটনায় ইমানুয়েল মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারখুম লুসাই স্বাক্ষরিত এক লিখিত অঙ্গীকারনামায় অক্সিজেন সংযোগে বিলম্বের বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষমা চান। সেখানে উল্লেখ করা হয়,
“২৩ আগস্ট দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অক্সিজেন সংযোগ বিলম্বের কারণে একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।”
তবে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে, এই অঙ্গীকারনামার মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ায় ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
আরো পড়ুন