কির্সতং আর রুংরাং হচ্ছে চিম্বুক রেঞ্জের সবচেয়ে উঁচু চূড়া। দুইটি চূড়াই কাছাকাছি অবস্থিত। কির্সতংয়ের চেয়ে মাত্র ৩০০ ফুট ছোট পর্বত রুংরাং। পাশাপাশি অবস্থিত পর্বত দুটি ট্রেকিংয়ের জন্য আদর্শ। এই এলাকাগুলো তাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঘন জঙ্গল এবং দুর্গম পথের জন্য পরিচিত, যা অভিযাত্রী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয়।
মারমা ভাষায় কির্স হচ্ছে এক ধরণের ছোট পাখি, আর তং অর্থ পাহাড়। অর্থাৎ, সেই বিশেষ ধরণের ছোট পাখির নামানুসারেই পাহাড়টির নামকরণ হয়েছে। অন্যদিকে, রুংরাং হচ্ছে ধনেশ পাখি । বলা হয়ে থাকে, এই পাহাড়ের জঙ্গলে নাকি শত শত ধনেশ পাখি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ কাটার জন্য জঙ্গল যাও-বা আছে, ধনেশ পাখি আর নাই বললেই চলে। যদিও, ২টা পাহাড়েই সারাক্ষণ পাখির কিচির মিচির শুনতে পাওয়া যায়।
কির্সতং এর অবস্থান চিম্বুক রেঞ্জে যার উচ্চতা আনুমানিক প্রায় ২৯৮০ ফুট। চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ চূড়া হিসেবে পরিচিত এই পাহাড়টি একসময় শত শত মাদারগাছের সংরক্ষিত বন ছিল। এই বনে বিভিন্ন প্রজাতীর বিলুপ্তপ্রায় পশু-পাখি ও প্রাণী বসবাস করে। মায়াবী এই কির্সতং এর জংগলের বেশির ভাগ জায়গাতেই সূর্যের আলো পৌছায় না। যেখানে মেঘের সঙ্গে রোদের লুকোচুরি খেলা চলে। বিশাল বিশাল গাছের ছাউনী দিয়ে ঘেরা বনটি এখনও বেশ বুনো রয়েছে। বনের ভেতর দিয়ে হাটতে হাটতে বেশ কিছু পাখির ডাক শোনা যায়। কির্সতং চূড়া থেকে বহুদূরের উঁচু পাহাড়ের চূড়াগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়।
চট্রগ্রাম থেকে আগত পর্যটক রিমন বলেন কির্সতং-এর বনভূমি এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি করে। সূর্যের আলো অধিকাংশ জায়গায় পৌঁছায় না, যেখানে মেঘ আর রোদের লুকোচুরি খেলা চলে। বিশাল গাছের ছায়ায় ঢাকা এই বন এখনও বুনো সৌন্দর্যে ভরপুর। বনের গভীরে হাঁটার সময় বিলুপ্তপ্রায় পাখির ডাক শোনা যায়, যা এই রহস্যময় জঙ্গলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। চূড়ায় দাঁড়িয়ে তিন্দু এলাকার দৃশ্য মনোমুগ্ধকর, যদিও ঘন বনভূমির কারণে চারপাশের প্রশস্ত ভিউ পাওয়া কঠিন। একসময় পাহাড়টি ছিল শত শত মাদারগাছের সংরক্ষিত বন, যেখানে বিভিন্ন বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী ও পাখির বসবাস ছিল।
আলীকদম উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন- কির্সতং ঘেরা ঘন অরণ্যে দিনের আলোও অনেক সময় পৌঁছাতে পারে না। বিশাল পুরোনো গাছের ছায়ায় যখন হাঁটা শুরু হয়, তখন মনে হয় যেন হাজার বছরের পুরোনো এক রহস্যময় বনে প্রবেশ করেছি। চারপাশে ভেসে আসে বিলুপ্তপ্রায় নানা প্রজাতির পাখির ডাক। ঝোপঝাড়ের ভেতর হঠাৎ করেই লেগে বসে জোঁক, আর পাহাড়ি বৃষ্টিতে পুরো জঙ্গল মুহূর্তেই হয়ে ওঠে জাদুকরি, অচেনা এক টুকরো স্বর্গ। তবে পথ মোটেও সহজ নয়। কোথাও পিচ্ছিল মাটি, কোথাও খাড়া ঢাল-একটু অসতর্ক হলেই সোজা নেমে যেতে হয় পাহাড়ের গহীনে। এই দুঃসাহসিক পথই কির্সতংয়ের মায়াকে আরও গাঢ় করে তোলে।
কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে প্রথমে বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় যেতে হবে। আলীকদম থেকে মোটরসাইকেল বা গাড়ি ভাড়া নিয়ে ২১ কিলোমিটার পয়েন্টে নেমে। সেখান থেকে খেমচংপাড়া। এখান থেকে কির্সতং চূড়া। এরপর খেমচংপাড়া হয়ে রুংরাং আর মেনিয়াংপাড়া হয়ে দুছড়ি বাজার। দুছড়ি বাজার থেকে নদীপথে আলীকদম। যথাযথ নিয়ম মেনে স্থানীয় লোকাল গাইড নিয়ে এই চূড়া আরোহন করা উচিত।
আরো পড়ুন
মারমা বাজারে কোন হাসিল দিবেন না,এটা আপনাদের অধিকার – অধ্যাপক থানজামা লুসাই