দীর্ঘ দুই বছর পর বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাহাড়চূড়ায় নির্মিত জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র কেওক্রাডং আগামী ১ অক্টোবর থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করেছে জেলা প্রশাসন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,১৭২ ফুট (৯৬৬ মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত এ পর্যটন স্পট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল।
জানা গেছে, বিগত বছরের এপ্রিল (২০২৩) মাসে এলাকায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাজনিত কারণে কেওক্রাডং ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। দুই বছর পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আবারও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে এ জনপ্রিয় স্পটটি। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মাঝে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পুরো রুটে ব্যবসা একেবারে ধুঁকছিল। অনেক দোকানপাট বন্ধ হওয়ার উপক্রম ছিল। চলতি বছরের ৬ জুন রুমার বগালেক উন্মুক্ত হওয়ার পর কিছুটা আশার আলো জেগেছিল। এবার কেওক্রাডং খোলায় পর্যটকের পদচারণায় আবারও মুখর হয়ে উঠবে পাহাড়ি এই রুট। তাদের আশা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে বিগত ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের দাবি, ধাপে ধাপে অন্যান্য স্পটও খুলে দেওয়া হলে বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসা পুরোদমে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
রুমার বগালেক-কেওক্রাডং রুটে গাড়িচালক মনির হোসেন বলেন, টুরিস্ট না থাকায় গাড়িচালকরা অনেকেই অন্য পেশায় চলে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ মালামাল পরিবহন করে জীবিকা চালাচ্ছিলেন। এখন পর্যটক এলে আবারও বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হবে।
টুরিস্ট গাইড মংক্য সিং মারমা বলেন, স্পট বন্ধ থাকায় অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছিলেন। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে পেশা ছেড়ে দেন। তবে কয়েক মাস আগে বগালেক খোলার পর আবার পর্যটক আসা-যাওয়া শুরু হয়। এখন কেওক্রাডং খুলে দেওয়ায় আমরা অনেক খুশি।
রুমা টুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক সাফুল বড়ুয়া বলেন, রুমায় বগালেক প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালু হওয়ার পর থেকেই পর্যটনে ভালো সাড়া মিলছে। কেওক্রাডং উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রবেশ আরও বাড়বে। সরকারি ছুটি সামনে থাকায় পর্যটক সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।
তিনি জানান, রুমায় বর্তমানে ৬১ জন অনুমোদিত টুর গাইড আছেন। প্রতি ১৪ জন পর্যটকের জন্য একজন করে গাইড দায়িত্ব পালন করেন। একইভাবে প্রতি ৬টি মোটরবাইকের জন্য একজন গাইড ইন করা হয়। গাইড ভাড়া একদিনের জন্য ১ হাজার টাকা এবং রাতযাপন করলে ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা আবাসিক হোটেল-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন বলেন, চলতি বছরে গত ৬ জুন রুমার বগালেক এবং থানচির তিন্দু ও তুমাতুঙ্গি এলাকায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এর পর থেকে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে কেওক্রাডং খোলার পর পর্যটন আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে জেলা জুড়ে হোটেল-মোটেলগুলো ১ অক্টোবর পর্যন্ত পুরোপুরি বুকিং হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি থানচির নাফাখুম পর্যটকদের জন্য দ্রুত উন্মুক্ত করার দাবিও জানান।
এ বিষয়ে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের জন্য পুলিশ ও সেনাবাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করছে। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, সব দিক বিবেচনা করেই কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ায় পর্যটক ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান নিয়মকানুন মেনে পর্যটকেরা সেখানে ভ্রমণ করতে পারবেন।
আরো পড়ুন